অপ্রতিরোধ্য ইয়াবা পাচার: উখিয়া-টেকনাফ থেকেই ৩২ জেলায় বিস্তার

শ.ম.গফুর,উখিয়া

ইয়াবা বিস্তার শুরু সীমান্তপথ টেকনাফ থেকেই।প্রায় প্রতিদিন টেকনাফ থেকে ইয়াবার বিশাল চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হচ্ছে। টেকনাফ থেকে দেশজুড়ে ইয়াবার ভয়ঙ্কর নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে।

টেকনাফসহ দেশের ৩২ জেলার সীমান্তবর্তী ৫১ পয়েন্ট দিয়ে পাচার করে আনা হচ্ছে হাজার কোটি টাকার ইয়াবাসহ হরেক রকম মাদক। এ ছাড়া স্থলপথ ও আকাশপথেও দেশে ঢুকছে বিভিন্ন নামের মাদকদ্রব্য। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সহজেই তা ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। এখন ইয়াবার বিস্তার দিন দিন বেড়েই চলেছে।

গ্রামগঞ্জের পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে শহরের অলিগলি কোথাও বাদ নেই, যেখানে হাত বাড়ালেই ইয়াবা মেলে না। এই ইয়াবার ছোবলে নষ্ট হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। হাজার কোটি টাকার বাজার গড়ে ওঠেছে এই মরণ নেশাকে কেন্দ্র করে। যদিও তা সম্পূর্ণ কালোবাজার।নিষিদ্ধ মার্কেট। এই সর্বনাশা নেশা ইয়াবা আসে একমাত্র মিয়ানমার থেকে। উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মী ও জনপ্রতিনিধিরাও এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের সম্পর্কে প্রশাসন ওয়াকিবহাল রয়েছেন। ইয়াবার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে অনেক সাংবাদিক তাদের দ্বারা নাজেহাল হয়েছেন।

পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, আমার ইউনিয়নের অনেক জনপ্রতিনিধি ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত ছিল। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর তাদেরকে এই অবৈধ ব্যবসা না করতে নিষেধ করা হয়েছে।

এখন তারা জড়িত আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন তাদেরকে এই ব্যবসা করতে দেখা যায় না।আমার অগোচরে যদি করে তা আর আমি বলতে পারি না। জানলে অবশ্যই প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হবে। আমার ইউনিয়নের অনেক স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররাও এই মরণ নেশা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে গেছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার দায়িত্ব মনে করে আমি তাদের অভিভাবকদের ডেকে জানিয়ে দিয়েছি। আমি আমার ইউনিয়নকে মাদকমুক্ত দেখতে চাই।

পরিকল্পিত উখিয়া চাই এর আহবায়ক সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, সরকার মাদকের বিরোদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছেন।

আমরা সরকারকে সাধুবাদ জানায়।অর্থ আর রাজনৈতিক প্রভাবে দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে এই মাদক মাফিয়ারা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এখন তাদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। বেগুনের ভেতর থেকে শুরু করে নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করছে ইয়াবা কারবারিরা। এই অবস্থায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধ্বংসের মাদক ব্যবসার প্রসার হচ্ছে দ্রুত।পাশাপাশি রোহিঙ্গারাও এই ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়েছেন।

সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা থেকে ইয়াবাসহ রোহিঙ্গাদের আটক করা হয়েছে। আর এবার দেশব্যাপী চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে বন্দুকযুদ্ধে টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর ও সাবেক উপজেলা যুবলীগের সভাপতি একরাম নিহত হওয়ার পর স্থানীয় সাংসদ আব্দুর রহমান বদি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন তিনি এই অবৈধ ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত ছিলেন না একজন নিরহ ও জনপ্রিয় কাউন্সিলর ছিলেন। এই ঘটনার পর বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

বিশেষঞ্জরা বলেন, ইয়াবা তৈরির মূল উপাদান মিথাইল অ্যামফিটামিন এবং ক্যাফেইন। একটি ট্যাবলেটে ৩০ থেকে ৩৫ মাত্রার মিথাইল অ্যামফিটামিন এবং বাকিটা ক্যাফেইন।

তবে দেশে আটক বেশিরভাগ ইয়াবার ক্ষেত্রে সে পরিমাণ উপাদানের উপস্থিতি নেই। এসবের সঙ্গে নানা ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির তৈরি ঘুমের ট্যাবলেট মিশানো হচ্ছে যেগুলো মৃত্যুর ঝুঁকি আরো বাড়ায়। অন্যদিকে যৌন উত্তেজনা বাড়াতে এসবের সঙ্গে মিশানো হচ্ছে ভায়াগ্রাসহ নানা যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটের গুঁড়া। ইয়াবার মতো ভয়ঙ্কর মাদক তৈরির উপাদান আমদানির ওপর কড়া নজরদারি করা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা ।

জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার চেয়ে দেশে তৈরি ইয়াবায় বেশি নেশা হয়। আসল ইয়াবার চেয়ে পাঁচগুণ বেশি ঝুঁকিও আছে ভেজাল ইয়াবায়। কম দামে পেয়ে আসক্তরা দেশে তৈরি ইয়াবা বেশি কেনে। শরীরের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকারক এই ভেজাল ইয়াবাতেই তুষ্ট মাদকসেবীরা।

সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর নিকেতনের একটি ফ্ল্যাটে আব্দুল্লাহ জুবায়ের নামে মিয়ানমারের এক নাগরিক ইয়াবা তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছিলেন।

তবে তিনি গত বছর ডিবি পুলিশের হাতে ৫০ হাজার পিস ইয়াবা,পাজেরো গাড়ি, ইয়াবা তৈরির মেশিনসহ গ্রেফতার হন।

উখিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সরওয়ার আলম শাহীন বলেন, ইয়াবা রাষ্ট্র, সমাজ এবং জাতির জন্য মারাত্মক ব্যাধিতে পরিনত হয়েছে। ইয়াবা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ইয়াবা রোধে পাচারকারীদের প্রতিরোধে প্রশাসন ও জনতার সম্মিলিত  প্রচেষ্টা দরকার।

তিনি আরো বলেন, সরকার মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। এ দেশের মানুষ যাতে মাদকদ্রব্য ও সন্ত্রাসের মতো কাজে জড়াতে না পারে।

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উখিয়ার শাহপরীরদ্ধীপ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশের উপ-পরিদর্শক রাজেস বড়ুয়া জানান, আমাদের ফাঁড়ি পুলিশ বড় কয়েকটি ইয়াবার চালান,গাড়ী ও জড়িত পাচারকারী আটক করে জেলহাজতে পাঠিয়েছি।

হাইওয়ে পুলিশ মাদক উদ্ধারে পুরস্কৃত হয়েছে একাধিকবার।আমরা পুলিশ বাহিনী নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আসছি।